আসসালামু আলাইকুম অর্থ কি

আসসালামু আলাইকুম অর্থ

সালামের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বরকত কামনা করা হয়। সালামের মাধ্যমে বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় । সকল মুসলমান একই পদ্ধতিতে কুশল বিনিময় করে, যাতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী আকৃষ্ট হয়। আস সালামু আলাইকুম অর্থ “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক”।

Assalamualaikum Bangla

সালাম দেয়া ও এর জবাব দেয়ার নিয়ম

সালাম দেয়ার বিধান : স্থানকালপাত্রভেদে ইসলামী শরীয়তে সালাম দেয়ার ভিন্ন ভিন্ন বিধান রয়েছে। যেমন-

  • স্বাভাবিক অবস্থায় এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাক্ষাতে সালাম দেয়া সুন্নাত, এতে ওলামায়ে কেরামের ইজমা হয়েছে। কেননা সালাম ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন।
  • নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, পানাহার, মলমূত্র ত্যাগ, যিকর আযকার ইত্যাদিতে মশগুল ব্যক্তিকে সালাম দেয়া মাকরূহ।

সালামের জবাব দেয়ার বিধান : এ ব্যাপারে কয়েকটি মতামত পরিলক্ষিত হয়। যেমন-

  • জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন- এ মতের ওপরই ফতোয়া।
  • কতিপয় আলেমের মতে, সালামের জবাব দেয়া সালাম দেয়ার ন্যায় সুন্নাত ।

***উল্লেখ্য, যেসব অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরূহ সেসব অবস্থায় সালামের জবাব দেয়াও মাকরূহ।

আরো পড়ুন:- পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব

কোন কোন অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরূহ

যে সকল অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরূহ : সালাম দেয়া যদিও একটি সুন্নাতি আদর্শ কিন্তু সর্বাবস্থায় সালাম দেয়া সমীচীন নয়। এখানে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। নিম্নলিখিত অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরূহ। যেমন-

নামাজরত অবস্থায়।পানাহাররত অবস্থায় ।
মলমূত্র ত্যাগ করা অবস্থায় ।কুরআন তেলাওয়াত অবস্থায় ।
ওয়াজ নসিহত কিংবা পাঠদান অবস্থায় ।যিকর আযকারে মশগুল থাকাবস্থায় ।

উল্লিখিত অবস্থায় অজ্ঞতাবশত কেউ সালাম দিলে এর জবাব দেয়া মাকরূহ। তবে সংশ্লিষ্ট কাজ হতে অবসর গ্রহণ করে জবাব দেবে এবং পরে তাকে এতৎসংক্রান্ত মাসয়ালা জানিয়ে দেবে।

মহিলাদেরকে সালাম প্রদানের বিধান

মহিলাদেরকে সালাম প্রদানের বিধান : হাদীস দ্বারা জানা যায়, মহানবী (স) মহিলাদেরকে সালাম করেছেন। যেমন-

উপর্যুক্ত হাদীসদ্বয়ের আলোকে বোঝা যায়, নারীদেরকে সালাম দেয়া বৈধ। আল্লামা ইবনুল মালেক (র) বলেন, এটা রাসূল (স)-এর জন্য বৈধ ছিল এবং এটা তাঁর জন্য খাস। কেননা তিনি ফেতনা থেকে মুক্ত ছিলেন। তবে নারীদেরকে সালাম দেয়া সম্পর্কে প্রাজ্ঞ আলেমগণের মতামত হচ্ছে-

  • মুহাররাম নারীদেরকে সালাম করা সুন্নাত,
  • অপরিচিত যুবতীদেরকে সালাম করা মাকরূহ,
  • বৃদ্ধ মহিলাদেরকে সালাম করা জায়েয,
  • কামভাব জাগ্রত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে গায়রে মুহাররাম মহিলাকে সালাম দেয়া মাকরূহ,
  • সকল আলেমের মতে, মহিলা কর্তৃক মহিলাকে সালাম দেয়া জায়েয চাই বৃদ্ধা হোক বা যুবতি,
  • পুরুষ আপন স্ত্রী ও সকল প্রকার মুহাররাম মহিলাকে সালাম দেয়া সুন্নাত ৷

সালামের উপকারিতা

সালামের মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে পরিচয় লাভ হয় ।পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়।
বন্ধুত্ব ভাব সৃষ্টি হয় ।আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়
পূর্বপরিচিত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।ঈমান মজবুত হয় ।
পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয় ।
এর মাধ্যমে অশেষ সাওয়াব অর্জিত হয়।পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

সালামের ফজিলত

সালাম ইসলামী শরীয়তে প্রচলিত একটি দোয়া, যা মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাতে বিনিময় হয়ে থাকে। এর মাসনূন শব্দ হচ্ছে- তথা আপনার ওপর শান্তি ও আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। যেহেতু শান্তি বর্ষণের দোয়া করা হচ্ছে, সেহেতু নিরাপত্তারও নিশ্চয়তা প্রার্থনা করা হচ্ছে।

অতএব তুমি আমাকে নিরাপত্তা প্রদান কর, যাতে পরস্পরের ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রসারিত ও সুদৃঢ় হয়, পরস্পরের মধ্যে বিবদমান শত্রুতা দূরীভূত হয় এবং সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।

সালামের ইতিহাস

ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সালাম, আর ‘সালাম’ নামক এ সুন্নাতি আদর্শের প্রবর্তন হয় সর্বপ্রথম হযরত আদম (আ)-কে কেন্দ্ৰ করেই। সালাম ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক।

হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ)-কে স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট গজ।

তাঁকে সৃষ্টি করে আল্লাহ তায়ালা বললেন, যাও ঐ দলটিকে সালাম প্রদান কর। আর তাঁরা হলেন ফেরেশতাদের উপবিষ্ট একটি দল। অতঃপর তাঁরা তোমার সালামের জবাবে কী বলে তা শ্রবণ কর। কেননা তারা যে জবাব দেবে তা-ই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের জবাব ।

অতঃপর আদম (আ) তাঁদের কাছে গেলেন এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন, আসসালামু আলাইকুম । ফেরেশতাগণ জবাবে বললেন, আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ । নবী করীম (স) বলেন, তাঁরা হযরত আদম (আ)-এর সালামের জবাবে ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ অতিরিক্ত বললেন।

অতঃপর রাসূল (স) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে, সে হযরত আদম (আ)-এর আকৃতিতেই প্রবেশ করবে এবং তার উচ্চতা হবে ষাট গজ। বস্তুত তাঁর [আদম (আ)-এর] পর থেকে অদ্যাবধি সৃষ্টির (বুখারী ও মুসলিম) আকৃতি ক্ৰমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (স)-কে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামের কোন অভ্যাসটি উত্তম? উত্তরে তিনি বললেন, ইসলামের উত্তম অভ্যাস হচ্ছে-

অপরকে খাবার খাওয়ানো এবংপরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া । (বুখারী ও মুসলিম)

আরো পড়ুন:- নবীর স্ত্রীদের নাম

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *