পদ কী

পদ কাকে বলে, বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া এবং অব্যয় পদ

পদ কাকে বলে

দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা মানুষের চিরন্তন কল্পনার রাজ্য চাঁদের দেশে পৌঁছেছেন এবং মঙ্গলগ্রহেও যাওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত হচ্ছেন ওপরের বাক্যটিতে ‘রা (অভিযাত্রী + রা), ‘এর’ (মানুষ + এর), ‘র’ (কল্পনা + র), ‘এ (মঙ্গলগ্রহ + এ) প্রভৃতি চিহ্নগুলোকে বিভক্তি বলা হয় ৷

বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত শব্দ ও ধাতুকে পদ বলে ।

পদ কত প্রকার ও কী কী

পদগুলো প্রধানত দুই প্রকার। যথা:-

  • সব্যয় পদ ও
  • অব্যয় পদ ।

সব্যয় পদ

সব্যয় পদ চার প্রকার যথা:-

সুতরাং পদ মোট পাঁচ প্রকার : বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া এবং অব্যয়।

ওপরের আলোচ্য বাক্যটিতে

বিশেষ্য পদদেশ, মঙ্গলগ্রহ, অভিযাত্রী, মানুষ, কল্পনা, রাজ্য,
বিশেষণ পদচিরন্তন, দুঃসাহসী, প্রস্তুত
সর্বনাম পদতাঁরা
ক্রিয়াপহচ্ছেন, পৌঁছেছেন, যাওয়ার
অব্যয় পদএবং, জন্য

বিশেষ্য পদ কাকে বলে

কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে।

বাক্যমধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদের বিশেষ্য পদ বলে।

বিশেষ্য পদ ছয় প্রকার

  • সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য (Proper Noun)
  • জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun)
  • বস্তু (বা দ্রব্য) বাচক বিশেষ্য ( Material Noun)
  • সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun)
  • ভাববাচক বিশেষ্য (Verbal Noun)
  • গুণবাচক বিশেষ্য (Abstract Noun)

সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য বা Proper Noun

যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, ভৌগোলিক স্থান বা সংজ্ঞা এবং গ্রন্থ বিশেষের নাম বিজ্ঞাপিত হয়, তাকে সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:-

ব্যক্তির নামওমর, আনিস, মাইকেল, নজরুল,
ভৌগোলিক স্থানেরদিল্লি, লন্ডন, মক্কা, ঢাকা,
ভৌগোলিক সংজ্ঞামেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর
গ্রন্থের নামদেশে বিদেশে’, ‘বিশ্বনবি, গীতাঞ্জলি’, ‘অগ্নিবীণা’

জাতিবাচক বিশেষ্য বা Common Noun

যে পদ দ্বারা কোনো একজাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায়, তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:-

গরুপাখি
মানুষগাছ
পর্বতনদী

বস্তু (দ্রব্য) বাচক বিশেষ্য বা Material Noun

যে পদে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায়, তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে।

লবণ, পানিবই, খাতা
কলম, থালাবাটি, মাটি, চাল, চিনি

এই জাতীয় বস্তুর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বা Collective Noun

যে পদে বেশকিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায়, তা–ই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যেমন-

মাহফিল, ঝাঁকসভা, জনতা
সমিতিপঞ্চায়েত, বহর, দল।

ভাববাচক বিশেষ্য বা Verbal Noun

যে বিশেষ্য পদে কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয়, তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে।

ভোজন (খাওয়ার কাজ)দর্শন (দেখার কাজ)
শয়ন (শোয়ার কাজ), দেখা, শোনা।গমন (যাওযার ভাব বা কাজ)

গুণবাচক বিশেষ্য বা Abstract Noun

যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায়, তা–ই গুণবাচক বিশেষ্য ।যেমন:-

মধুর মিষ্টত্বের গুণ— মধুরতাতরল দ্রব্যের গুণ—তারল্য
তিক্ত দ্রব্যের দোষ বা গুণ— তিক্ততা, তরুণের গুণ—তারুণ্য, সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ।

বিশেষণ পদ

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন-

চলন্ত গাড়ি: বিশেষ্যের বিশেষণ।দ্রুত চল: ক্রিয়া বিশেষণ। করুণাময় তুমি: সর্বনামের বিশেষণ।

বিশেষণ পদ দুই ভাগে বিভক্ত। যথা—

১. নাম বিশেষণ ও ২. ভাব বিশেষণ।

নাম বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন-

বিশেষ্যের বিশেষণ : সুস্থ সবল দেহকে কে না ভালোবাসে ?সর্বনামের বিশেষণ : সে রূপবান ও গুণবান।

ভাব বিশেষণ

যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে বিশেষিত করে তা-ই ভাব বিশেষণ।

ভাব বিশেষণ চার প্রকার

সর্বনাম পদ

সর্বনাম পদ কাকে বলে

বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। যেমন-

হাতি প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তার শরীরটি যেন বিরাট এক মাংসের স্তূপ। দ্বিতীয় বাক্যে ‘তার’ শব্দটি প্রথম বাক্যের ‘হাতি’ বিশেষ্য পদটির প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই, ‘তার’ শব্দটি সর্বনাম পদ।

অব্যয় পদ

অব্যয় পদ কাকে বলে

ন ব্যয় = অব্যয়। যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়।

যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বর্ধন করে, কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বদ্ধ ঘটায়, তাকে অব্যয় পদ বলে।

অব্যয় শব্দের সাথে কোনো বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয় না, সেগুলোর একবচন বা বহুবচন হয় না এবং সেগুলোর স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না।

বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ রয়েছে—

বাংলা অব্যয় শব্দআর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
তৎসম অব্যয় শব্দঅর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত, যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ ইত্যাদি।
বিদেশি অব্যয় শব্দ মাইরি, মারহাবা আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা।

অব্যয় কত প্রকার

অব্যয় প্রধানত চার প্রকার-

১. সমুচ্চয়ী, ২. অনন্বয়ী, ৩. অনুসর্গ, ৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়।

সমুচ্চয়ী অব্যয়

যে অব্যয় পদ একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের অথবা বাক্যস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বা সম্বন্ধবাচক অব্যয় বলে।

সংযোজক অব্যয়:তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। এখানে ‘তাই’ অব্যয়টি দুটি বাক্যের সংযোজন ঘটাচ্ছে।
বিয়োজক অব্যয়:রহিম কিংবা করিম এর জন্য দায়ী। এখানে ‘কিংবা’ অব্যয়টি দুটি পদের বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটাচ্ছে।
সংকোচক অব্যয় :তিনি বিদ্বান, অথচ সৎ ব্যক্তি নন। এখানে ‘অথচ’ অব্যয়টি দুটি বাক্যের মধ্যে ভাবের সংকোচ সাধন করেছে। কিন্তু, বরং শব্দগুলোও সংকোচক অব্যয়।
অনুগামী সমুচ্চয়ী অব্যয় :যে, যদি, যদিও, যেন প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ সংযোজক অব্যয়ের কাজ করে থাকে। তাই তাদের অনুগামী সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। যেমন:- এভাবে চেষ্টা করবে যেন কৃতকার্য হতে পার।

অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে

যে সকল অব্যয় বাক্যের অন্য পদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রেখে স্বাধীনভাবে নানাবিধ ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয়, তাদের অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন-

উচ্ছ্বাস প্রকাশেমরি মরি! কী সুন্দর প্রভাতের রূপ!
অনুমোদনবাচকতায়আপনি যখন বলছেন, বেশ তো আমি যাব।
সমর্থনসূচক জবাবেআপনি যা জানেন তা তো ঠিকই বটে।
যন্ত্রণা প্রকাশেউঃ! পায়ে বড্ড লেগেছে। নাঃ! এ কষ্ট অসহ্য।
ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশেছি ছি, তুমি এত নীচ

অনুসর্গ অব্যয়

যে সকল অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির ন্যায় বসে কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাদের অনুসর্গ অব্যয় বলে। যথা—

ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না।

অনুসর্গ অব্যয়কে ‘পদান্বয়ী অব্যয়’ বলা হয়ে থাকে।

অনুকার অব্যয়

যে সকল অব্যয় অব্যক্ত রব, শব্দ বা ধ্বনির অনুকরণে গঠিত হয়, সেগুলোকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে।

স্রোতের ধ্বনি – কল কলঘোড়ার ডাক – চিঁহি চিহি
বাতাসের গতি – শন শনকাকের ডাক— কা কা
শুষ্ক পাতার শব্দ – মর মরকোকিলের রব – কুহু কুহু
মেঘের গর্জন – গুড় গুড়চুড়ির শব্দ – টুং টাং
বজ্রের ধ্বনি— কড় কড়নূপুরের আওয়াজ – রুম ঝুম
বৃষ্টির তুমুল শব্দ – ঝম ঝমসিংহের গর্জন – গর গর

আরো পড়ুন:- বাক্য কাকে বলে | সরল, যৌগিক, জটিল বা মিশ্র বাক্য

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *