ধ্বনি কাকে বলে

ধ্বনি পরিবর্তন

কোনো ভাষার শব্দ বহুজনে ব্যবহৃত হতে হতে কখনো সেই শব্দের  কোনো ধ্বনি লোপ পায় বা এতে নতুন ধ্বনির আগমন ঘটে কিন্তু পরিবর্তিত ধ্বনিটি দ্বারা পূর্বের অর্থটিই বোঝায়। শব্দের ধ্বনিসমূহের এরূপ পরিবর্তনকে ধ্বনি পরিবর্তন বলে।

উদাহরণ:-

স্কুল > ইস্কুলআজি > আইজ
বাক্য > বাইক্যগ্রাম > গেরাম

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ

দ্রুত উচ্চারণের জন্য।
উচ্চারণের সহজতা জন্য।
উচ্চারণের সময় বক্তার অসাবধানতার জন্য।

আদি স্বরাগম (Prothesis)

উচ্চারণের সুবিধার জন্য শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলে আদি স্বরাগম বা  (Prothesis)।

উদাহরণ-

স্তুপ>ইস্তুপ, স্কুল > ইস্কুল, ইত্যাদি।

মধ্য স্বরাগম, স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ  (Anaptyxis)

সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জন-ধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। তখন তাকে বলা হয় মধ্য স্বরাগম / স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ ।

উদাহরণ-

রত্ন > রতন, স্বপ্ন > স্বপন, ধর্ম > ধরম,  প্রীতি > পিরীতি, ক্লিপ > কিলিপ, মুক্তা > মুকুতা, তুর্ক > তুরুক, গ্রাম > গেরাম, স্রেফ > সেরেফ  মুরগ > মুরোগ > মোরগ ইত্যাদি।

অন্ত্যস্বরাগম (Apothesis )

শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম।

উদাহরণ-

পোখত্ > পোক্ত, সত্য > সত্যি ইত্যাদি।

অপিনিহিতি (Apenthesis)

পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে।

উদাহরণ-

সাধু>সাউধ, রাখিয়া > রাইখ্যা, আজি > আইজ,  বাক্য > বাইক্য, সত্য > সইত্য, চারি > চাইর, ইত্যাদি।

অসমীকরণ (Dissimilation)

একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি হয় তখন তাকে বলে অসমীকরণ।

উদাহরণ-

টপ + টপ > টপাটপ ধপ্ + ধপ ধপাধপ,  ইত্যাদি।

স্বরসঙ্গতি (Vowel harmony)

একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে বলে স্বরসঙ্গতি।

উদাহরণ –

বিলাতি > বিলিতি, দেশি > দিশি,  মুলা > মুলো ইত্যাদি।

সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ :

দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলে সম্প্রকর্ষ।

জানালা > জালা, বসতি > বস্তি, ইত্যাদি।

ধ্বনি বিপর্যয়

শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে।

উদাহরণ-

বাক্স >  বাস্ক,  রিক্সা > রিস্কা ইত্যাদি।

সমীভবন (Assimilation)

শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করাকে বলা হয় সমীভবন।

উদাহরণ-

কাঁদনা > কান্না, জন্ম > জন্ম, ইত্যাদি।

বিষমীভবন (Dissimilation)

দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে।

উদাহরণ

লাল > নাল  শরীর > শরীল, ইত্যাদি।

দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বা (Long Consonant)

কখনো কখনো জোর দেয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়, একে বলে ব্যঞ্জনদ্বিত্বা বা দ্বিত্ব ব্যঞ্জন ।

উদাহরণ-

সকাল > সক্কাল, পাকা > পাক্কা, ইত্যাদি।

ব্যঞ্জন বিকৃতি

শব্দ-মধ্যে কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হওয়াকে বলে ব্যঞ্জন বিকৃতি।

উদাহরণ-

ধোবা > ধোপা, ধাইমা > দাইমা, কবাট > কপাট,  ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনচ্যুতি বা ধ্বনিচ্যুতি

পাশাপাশি সমউচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায়। এরূপ লোপ পাওয়াকে বলা হয় ব্যঞ্জনচ্যুতি বা ধ্বনিচ্যুতি।

উদাহরণ-

বড় দাদা > বড়দা, বউদিদি > বউদি, ইত্যাদি।

অন্তর্হতি

পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি ।

উদাহরণ-

ফাল্গুন > ফাগুন, আলাহিদা > আলাদা, ফলাহার > ফলার, ইত্যাদি।

র-কার লোপ

আধুনিক চলিত বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়।

উদহরণ-

করতে > কত্তে, মারল > মাল্ল, তর্ক > তব্ধ,  করলাম > কল্লাম।

হ-কার লোপ

আধুনিক চলিত ভাষায় অনেক সময় দুই স্বরের মাঝামাঝি হ-কারের লোপ হয়।

উদাহরণ-

পুরোহিত > পুরুত, গাহিল > গাইল, চাহে > চায়, আরবি আল্লাহ্ > বাংলা আল্লা, ফারসি শাহ্, বাংলা শা,  সাধু সাহু > সাউ, ইত্যাদি।

আরো পড়ুন:- সন্ধি

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *