বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

তদ্ধিত প্রত্যয়

তদ্ধিত প্রত্যয় কাকে বলে

# মেয়েটি বড় লাজুক।

# বড়াই করা ভালো না ।

ওপরের  ‘লাজুক’, ‘বড়াই’ শব্দগুলো গঠিত হয়েছে এভাবে : লাজুক= লাজ + উক; বড়াই=বড়+আই; । ‘লাজ ও ‘বড়’ শব্দগুলোর পরে যথাক্রমে ‘উক, ‘আই’(প্রত্যয়) যোগ করে নতুন শব্দ গঠিত হয়েছে।

শব্দের সঙ্গে (শেষে) যেসব প্রত্যয় যোগে নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাদের তদ্ধিত প্রত্যয় বলা হয়।

বি. দ্র: ‘লাজ’ ‘বড়’ ও ‘- এ শব্দগুলোর সাথে কোনো শব্দ/বিভক্তি যুক্ত হয় নি। বিভক্তিহীন নাম শব্দকে বলা হয় প্রাতিপদিক। প্রাতিপদিক তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকৃতি বলে প্রাতিপদিককে নাম প্রকৃতিও বলা হয়।

ক্রিয়া প্রকৃতি এবং নাম প্ৰকৃতি

ধাতু যেমন কৃৎ-প্রত্যয়ের প্রকৃতি, তেমনি প্রাতিপদিকও তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকৃতি। প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুকে বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি এবং প্রাতিপদিককে বলা হয় নাম প্ৰকৃতি।

তদ্ধিত প্রত্যয় তিন প্রকার ৷ যথা- বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়, বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় এবং তৎসম বা সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় ।

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

 আ-প্রত্যয়

জাত ও আগত অর্থে :দখিন-দখিনা> দখনে (হাওয়া), মহিষ>ভইস-ভয়সা (ঘি)
সমষ্টি অর্থে :বাইশ-বাইশা (মাসের বাইশা> বাইশে, বিশ –বিশা
‘তাতে আছে’ বা ‘তার আছে’ অর্থে :জল + আ=জলা, গোদ + আ=গোদা। এরূপ : রোগ –রোগা,
বৃহদার্থে :ডিঙি + আ= ডিঙা (সপ্তডিঙা মধুকর)।
অবজ্ঞার্থে :চোর + আ = চোরা, কেষ্ট + আ = কেষ্টা
সদৃশ অর্থে :বাঘ+আ=বাঘা, হাত + আ=হাতা। এরূপ : কাল – কালা (চিকন কালা), কান–কানা।
স্বার্থে :জট+আ-জটা, চোখ-চোখা, চাক—চাকা।
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে :হাজির – হাজিরা, চাষ-চাষা ।

আই-প্রত্যয়

বিশেষণ গঠনে : মোগল-মোগলাই (পরোটা), চোর-চোরাই (মাল)।
সমগুণবাচক বিশেষ্য গঠনে :মিঠা +আই=মিঠাই।
আদরার্থে :কানু+আই=কানাই, নিম+আই=নিমাই ।
ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে :বড়+আই=বড়াই, চড়া +আই=চড়াই।
স্ত্রী বা পুরুষবাচক শব্দের বিপরীত বোঝাতে :বোন+আই= বোনাই, ননদ-নন্দাই, জেঠা-জেঠাই (মা)।
জাত অর্থে :ঢাকা+আই=ঢাকাই (জামদানি), পাবনা – পাবনাই (শাড়ি)।

আমি/আম/আমো /মি-প্রত্যয়

 নিন্দা জ্ঞাপন : ছেলে+আমি=ছেলেমি, জেঠা+আমি=জেঠামি
বৃত্তি (জীবিকা) অর্থে : ঠক+আমো=ঠকামো, ঘর+আমি=ঘরামি
ভাব অর্থে : পাগল+ আমি = পাগলামি, ইতর+আমি =ইতরামি, ফাজিল +আমো=ফাজলামো, চোর+আমি =চোরামি।

ই/ঈ-প্রত্যয়

মালিক অর্থে : জমিদার-জমিদারি, দোকান-দোকানি ।
জাত, আগত বা সম্বন্ধ বোঝাতে : রেশম-রেশমি, সরকার-সরকারি,ভাগলপুর-ভাগলপুরি, মাদ্রাজ-মাদ্রাজি।
ভাব অর্থে : বাহাদুর + ই = বাহাদুরি, উমেদার-উমেদারি।
বৃত্তি বা ব্যবসায় অর্থে : পোদ্দার-পোদ্দারি, ব্যাপার- ব্যাপারি, চাষ-চাষি, ডাক্তার-ডাক্তারি, মোক্তার মোক্তারি।

বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়

ওয়ান>আন (হিন্দি) : গাড়ি-গাড়োয়ান, দার -দারোয়ান ।
ওয়ালা > আলা (হিন্দি) : দিল্লি-দিল্লিওয়ালা (অধিবাসী অর্থে), বাড়ি-বাড়িওয়ালা (মালিক অর্থে),
আনা>আনি (হিন্দি) : মুনশি-মুনশিয়ানা, বিবি-বিবিআনা, হিন্দু-হিন্দুয়ানি
গর> কর (ফারসি) : কারিগর, বাজিকর, সওদাগর।
সা (হিন্দি) : পানি-পানসা> পানসে, এক–একসা, কাল (কাল) – কালসা>কালসে।

সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়

ষ্ণ, ষ্ণি, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ইত, ইমন, ইল, ইষ্ট, ঈন, তর, তম, তা, ত্ব, নীন, নীয়, বতুপ্, বিন্, র, ল প্রভৃতি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যে সমস্ত শব্দ গঠিত হয়, সেগুলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় । নিচে উদাহরণ সহ আলোচনা করা হলো-

যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ (অ) প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার প্রাতিপদিকের অন্ত্যস্বরের উ-কারও ও-কারে পরিণত হয়। ও +অ সন্ধিতে ‘অব’ হয়। যেমন-

শিশু +ষ্ণ=শৈশবমনু + ষ্ণ=মানব
গুরু+ষ্ণ=গৌরবলঘু+ষ্ণ =লাঘব

যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ (অ)-প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমন-

মধুর +ষ্ণ=মাধুর্য।নগর+ষ্ণ=নাগর

বৃদ্ধি : (১) অ-স্থানে আ, (২) ই, ঈস্থানে ঐ, (৩) উ, ঊ-স্থানে ঔ এবং (৪) ঋ-স্থানে আর হওয়াকে বৃদ্ধি বলে।

দুটি শব্দের দ্বারা গঠিত সমাসবদ্ধ শব্দের অথবা উপসর্গযুক্ত শব্দের সঙ্গে তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে উপসর্গসহ শব্দের বা শব্দ দুটির মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমন-

সর্বভূমি+ ষ্ণ=সার্বভৌম।পরলোক +ষ্ণিক =পারলৌকিক।
পঞ্চভূত+ষ্ণিক=পাঞ্চভৌতিক।সুভগ+ষ্ণ্য=সৌভাগ্য ।

ব্যতিক্রম : ‘বর্ষ’ শব্দ পরপদ হলে পূর্বপদের সংখ্যাবাচক শব্দের মূল স্বরের বৃদ্ধি হয় না।

যথা-দ্বিবর্ষ +ষ্ণিক= দ্বিবার্ষিক।

সংখ্যাবাচক শব্দ না থাকলেও নিয়মমতো মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমন-

বর্ষ + ষ্ণিক=বার্ষিক।

আরো পড়ুন:- ধাতু: মৌলিক ধাতু এবং সাধিত ধাতু

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *