বাংলা বানানের নিয়ম

ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান

বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধন্য-ণ ধ্বনির ব্যবহার নেই। কিন্তু বাংলা ভাষায় বহু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য- ন-এর ব্যবহার আছে। তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের বানানে মূর্ধন্য  (ণ) লেখার প্রয়োজন হয় না।

ণ-ত্ব বিধান কাকে বলে

তৎসম শব্দের বানানে ণ-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণ-ত্ব বিধান।

ণ ব্যবহারের নিয়ম

  • ট—বর্গীয় ধ্বনির আগে তৎসম শব্দে সব সময় মূর্ধন্য ‘ণ যুক্ত হয়।
ঘণ্টালণ্ঠন, কাণ্ড
  • ঋ, র, ষ এর পরে মূর্ধন্য ‘ণ হয়। যেমন –
ঋণ, তৃণ, বর্ণ, বর্ণনা, কারণ, মরণ, ব্যাকরণ, ভীষণ, ভাষণ, উষ্ণ ইত্যাদি।
  • ঋ, র, ষ-এর পরে স্বরধ্বনি, ষ য় ব হ ং এবং ক-বর্গীয় ও প-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে তার পরবর্তী ন মূর্ধন্য ‘ণ হয়। যেমন –
কৃপণ (ঋ-কারের পরে প্, তার পরে ণ)হরিণ (র-এর পরে ই, তার পরে ণ,

কতকগুলো শব্দে স্বভাবতই ণ হয়।

চাণক্য মাণিক্য গণকল্যাণ শোণিত মণি
বাণিজ্য লবণ মণআপণ লাবণ্য বাণী
চিক্কণ নিক্কণ তূণস্থাণু গুণ পুণ্য বেণী
ফণী অণু বিপণি গণিকা।নিপুণ ভণিতা পাণি
গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ।কফণি (কনুই), বণিক গুণ
বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা। গণনা পিণাক পণ্য বাণ ।

সমাসবদ্ধ শব্দে সাধারণত ণ-ত্ব বিধান খাটে না। এরূপ ক্ষেত্রে ন হয়। যেমন –

ত্রিনয়ন, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার, পরনিন্দা, অগ্রনায়ক। ত-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত ন কখনো ণ হয় না, ন হয়। যেমন – অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন।

ষ-ত্ব বিধান কাকে বলে

তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য ‘ষ- এর ব্যবহারের নিয়মকে ষত্ব বিধান বলে।

ষ ব্যবহারের নিয়ম

  • অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি এবং ক ও র-এর পরে প্রত্যয়ের স ষ হয়। যেমন-
ভাবষ্যৎ (ভ + অ + ব + ই + )  এখানে ব–এর পরে ই-এর ব্যবধান), মুমূর্ষু, চক্ষুষ্মান, চিকীর্ষা ইত্যাদি।
  • ই-কারান্ত এবং উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতগুলো ধাতুতে ‘ষ’ হয়। যেমন –
অভিসেক > অভিষেক, সুসুপ্ত > সুষুপ্ত, অনুসঙ্গ > অনুষঙ্গ, প্রতিসেধক > প্রতিষেধক, প্রতিস্থান > প্রতিষ্ঠান, অনুস্থান অনুষ্ঠান, বিসম > বিষম, সুসমা > সুষমা ইত্যাদি।
  • ‘ঋ এবং ঋ কারের পর ‘ষ হয়। যেমন—
ঋষি, কৃষক, উৎকৃষ্ট, দৃষ্টি, সৃষ্টি ইত্যাদি।
  • তৎসম শব্দে ‘র’-এর পর ‘ষ’ হয়। যেমন-
বর্ষা, ঘর্ষণ, বর্ষণ।
  • র— ধ্বনির পরে যদি অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি থাকে তবে তার পরে ‘ষ হয়। যথা :
পরিষ্কার। কিন্তু অ, আ স্বরধ্বনি থাকলে স হয়। যথা পুরস্কার।
  • ট-বর্গীয় ধ্বনির সঙ্গে ‘ষ’ যুক্ত হয়। যথা :
কষ্ট, স্পষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ ইত্যাদি।

কতগুলো শব্দে স্বভাবতই ‘ষ হয়

ষড়ঋতু, রোষ, কোষ, আষাঢ়, ভাষণ, ভাষা, ঊষা, পৌষ, কলুষ, পাষাণ, মানুষ, ঔষধ, ষড়যন্ত্র, ভূষণ, দ্বেষ ইত্যাদি।

বি.দ্র: আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে আগত শব্দে ষ হয় না। এ সম্বন্ধে সতর্ক হতে হবে। যেমন—

জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট ইত্যাদি।
  • ও. সংস্কৃত ‘সাৎ প্রত্যয়যুক্ত পদেও ষ হয় না। যেমন-
অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।

আরো পড়ুন:- শুদ্ধ বানানের নিয়ম

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *