গঠন অনুসারে শ্রেণিবিভাগ
গঠন অনুসারে শব্দ দুই প্রকার। যথা-
১. মৌলিক শব্দ এবং
২. সাধিত শব্দ
মৌলিক শব্দ কাকে বলে
যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা যায় না বা ভেঙে আলাদা করা যায় না, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন-
| গোলাপ | তিন |
| লাল | নাক |
সাধিত শব্দ কাকে বলে
যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করা হলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। যেমন-
| চাঁদমুখ (চাঁদের মতো মুখ) | গরমিল (গর+মিল) |
| নীলাকাশ (নীল যে আকাশ) | চলন্ত (চল্ + অন্ত) |
অর্থানুসারে শব্দ কত প্রকার
অর্থানুসারে শব্দ তিন প্রকার। যথা-
১. যৌগিক শব্দ
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
৩. যোগরূঢ় শব্দ
যৌগিক শব্দ কাকে বলে
যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই রকম, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন-
| মধুর = মধু + র –অর্থ : মধুর মতো মিষ্টি গুণযুক্ত। | গায়ক = গৈ + ণক (অক) – অর্থ : গান করে যে। |
| দৌহিত্র = দুহিতা+ষ্ণ্য – অর্থ : কন্যার পুত্র, নাতি ৷ | কর্তব্য = কৃ + তব্য – অর্থ : যা করা উচিত। |
রূঢ়ি শব্দ কাকে বলে
যে শব্দ প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে, তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন-
| হস্তী=হস্ত + ইন, অর্থ-হস্ত আছে যার; কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়। | গবেষণা (গো+এষণা) অর্থ— গরু খোঁজা। বর্তমান অর্থ ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা। |
যোগরুঢ় শব্দ কাকে বলে
সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন-
| পঙ্কজ – পঙ্কে জন্মে যা , শৈবাল, পদ্মফুল প্রভৃতি উদ্ভিদ পঙ্কে জন্মে থাকে। কিন্তু ‘পঙ্কজ’ শব্দটি একমাত্র ‘পদ্মফুল’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই এটি যোগরূঢ় শব্দ। | জলধি – ‘জল ধারণ করে এমন’ অর্থ পরিত্যাগ করে একমাত্র ‘সমুদ্র’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। |
| মহাযাত্রা | রাজপুত |
উৎপত্তি অনুসারে শব্দ কত প্রকার
উৎসমূলক বা উৎপত্তি অনুসারে শব্দ পাঁচ প্রাকার। যথা-
(১) তৎসম (২) অর্ধ-তৎসম (৩) তদ্ভব (৪) দেশি ও (৫) বিদেশি।
তৎসম শব্দ কাকে বলে
তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ [তৎ (তার)+ সম (সমান)]=তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃত। যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। যেমন-
| সূর্য | নক্ষত্র |
| চন্দ্র | ধর্ম |
তদ্ভব শব্দ কাকে বলে
তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ, ‘তৎ(তার) থেকে ‘ভব’ (উৎপন্ন)।
যেসব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ বা খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন –
| চামার | সংস্কৃত-হস্ত |
| প্রাকৃত-হথ | তদ্ভব—হাত |
অর্ধ-তৎসম শব্দ কাকে বলে
তৎসম মানে সংস্কৃত। আর অর্ধ তৎসম মানে আধা সংস্কৃত। বাংলা ভাষায় কিছু সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে বলে অর্ধ-তৎসম শব্দ।
| গৃহিণী, বৈষ্ণব | বোষ্টম |
| জ্যোছনা, ছেরাদ্দ গিন্নী | শ্রাদ্ধ |
দেশি শব্দ কাকে বলে
বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত রয়েছে। এসব শব্দকে দেশি শব্দ নামে অভিহিত করা হয়।
| ডাব, ডাগর | চোঙ্গা, টোপর |
| কুলা, গঞ্জ | ঢেঁকি |
আরো পড়ুন:- বাংলা বানাননের নিয়ম
বিদেশি শব্দ কাকে বলে
বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় এসে স্থান করে নিয়েছে। এসব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যেমন-
আরবি শব্দ
| মুন্সেফ, মোক্তার, জাকাত, হজ, হাদিস, কিয়ামত, গোসল, আলেম, ইনসান, ওজর, এজলাস, কিতাব, কেচ্ছা, দোয়াত, নগদ, আল্লাহ্, ইসলাম, ঈমান, ওজু, কোরবানি, কুরআন, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, তসবি, হারাম, হালাল,আদালত, ঈদ, উকিল, এলেম, কানুন, কলম, খারিজ, গায়েব, বাকি, মহকুমা, রায় ইত্যাদি । |
ফারসি শব্দ
| গুনাহ, নামাজ, ফেরেশতা, রোজা, চশমা, তারিখ, , দফতর, দোকান, দৌলত, বাদশাহ, বেগম, রসদ , খোদা, দোজখ, পয়গম্বর, বেহেশত, রফতানি, জবানবন্দি, তোশক, দরবার, দস্তখত, নালিশ, বান্দা, মেথর,আদমি, জানোয়ার নমুনা, কারখানা, আমদানি, , জিন্দা, বদমাশ, হাঙ্গামা ইত্যাদি । |
ইংরেজি শব্দ
| ইউনিভার্সিটি, কলেজ, নোট, পেন্সিল, হাসপাতাল (Hospital), লাইব্রেরি, আফিম (Opium, ইস্কুল (School), ফুটবল, ইউনিয়ন, , টিন, নভেল,পাউডার, ব্যাগ, মাস্টার, স্কুল, অফিস (Office), বাক্স (Box), বোতল (Bottle) ইত্যাদি। |
পর্তুগিজ শব্দ
| আনারস, আলমারি, আলপিন, গির্জা, চাবি, পাউরুটি, গুদাম, পাদ্রি, বালতি ইত্যাদি। |
ফরাসি শব্দ
| কার্তুজ, রেস্তোরাঁ কুপন, ডিপো, ইত্যাদি। |
ওলন্দাজ শব্দ
| ইস্কাপন, রুইতন, হরতন টেক্কা, তুরুপ, ইত্যাদি । |
পাঞ্জাবি শব্দ
| চাহিদা, শিখ ইত্যাদি। |
জাপানি শব্দ
| রিক্সা, হারিকিরি ইত্যাদি। |
চিনা শব্দ
| চা, চিনি ইত্যাদি। |
গুজরাটি শব্দ
| খদ্দর, হরতাল ইত্যাদি। |
তুর্কি শব্দ
| চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ইত্যাদি। |
মায়ানমার (বার্মিজ) শব্দ
| ফুঙ্গি, লুঙ্গি ইত্যাদি। |
মিশ্র শব্দ
| চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি) | ডাক্তার-খানা (ইংরেজি+ফারসি) |
| হেড-পণ্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) | হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি) |
| যেমন বাদশা (তৎসম+ফারসি) | হেড-মৌলভি (ইংরেজি+ফারসি) |
| খ্রিষ্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম) | পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা) |
আরো পড়ুন:- বিপরীত শব্দ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ননমূহ




